আমাদের ত্বকের জন্য সূর্যের আলোর প্রয়োজন। তবে এ আলোই আবার ত্বকের সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। ত্বক তামাটে ও বুড়িয়ে দেওয়ার পেছনে বেশ অবদান এ রোদের। তাই ত্বক বাঁচাতে জেনে নেওয়া প্রয়োজন সূর্যের এ আলো সম্পর্কে।
সূর্যের আলো
বিভিন্ন মাপের তরঙ্গ আকারে সূর্য থেকে তড়িৎ-চুম্বকীয় বেরিয়ে আসছে অজস্র শক্তিতে। পৃথিবীর বুকে পৌঁছে এমন রশ্মি মোটামুটি তিন ভাগে বিভক্ত। আমরা জানি, সূর্যের আলো আসলে সাতটি রঙের সমষ্টি। বেগুনি, তুঁতে, নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। এই সাত রঙ মিলে যে রশ্মি, তা আমাদের চোখে ধরা পড়ে। এ রশ্মির তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য ৪০০ থেকে ৭০০ ন্যানোমিটার। এগুলো থেকে আকারে বড় যেসব রশ্মি অর্থাৎ লালের পর যেগুলোর স্থান, তা চোখে দেখি না। এর নাম ইনফ্রা-রেড রশ্মি। এগুলো সৃষ্টি করে উত্তাপ। রোদে দাঁড়িয়ে থাকলে আমাদের যে গরম লাগে, এর কারণ এই ইনফ্রা-রেড রশ্মি। ইদানীং অনেকে এ রশ্মি ল্যাম্পে ব্যবহার করেন বা দেখে থাকবেন। বাতব্যথা বা অন্য কারণে অনেকে এ রশ্মি নিয়ে থাকেন। এতে ত্বক বা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়। আসলে এ রশ্মি গরম সেঁকের মতো কাজ করে। আর চোখে দেখার রশ্মির চেয়ে তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য ছোট যেগুলো অর্থাৎ বেগুনি রঙের নিচে যেটির নাম, তা হলো অতি বেগুনিরশ্মি বা আল্ট্রাভায়োলেট রে। এর তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য ২৯০ থেকে ৪০০ ন্যানোমিটার। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি (ইউভিআর) আবার ভাগ করা হয় তিন ভাগে। এগুলোর মধ্যে বড় হলো ইউভিএ। তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য ৩২০ থেকে ৪০০ ন্যানোমিটার। প্রখর রোদে ঘুরে এলে ত্বকে যে কালচে আভা দেখা যায়, এ জন্য দায়ী এই ইউভিএ। রোদে না বের হলে এ আভা ক্রমেই মিলিয়ে যায় অর্থাৎ এ রঙের পরিবর্তন ক্ষণস্থায়ী। ইউভিবি হলো এর পরের ধাপ। এর তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য ২৮০ থেকে ৩২০ ন্যানোমিটার।
ইউভিবি যা করে
রোদে ঘুরে এলে ত্বক যে লালচে হয়ে যায়, এর পেছনে রয়েছে এ ইউভিবি। দিনের পর দিন রোদে ঘুরলে ত্বক তামাটে বা কালচে বর্ণের হওয়ার জন্য দায়ী এ ইউভিবি। এ রঙের পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী। এর নাম সানট্যান। দীর্ঘদিন রোদে কাটালে ত্বক বুড়িয়ে যায়। অনেক সময় ত্বকে ক্যানসারের লক্ষণ দেখা দেয়। এসবের জন্য দায়ী ইউভিবি। এর তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য ২০০ থেকে ২৮০ ন্যানোমিটার। পৃথিবীর আবহাওয়ামন্ডলে যে ‘ওজোন’ স্তর আছে, এর বেশিরভাগ ইউভিসি শুষে নেয়, পৃথিবীপৃষ্ঠে পৌঁছাতে দেয় না। এ ইউভিসি আবার জীবাণুনাশক। অপারেশন থিয়েটার জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহার করা হয় ইউভিসি ল্যাম্প। তবে এ রশ্মি কোনোভাবে চোখে লাগলে কনজাংক্টিভাইটিস বা ত্বকে সানবার্ন হতে পারে।
মেঘের স্তর সূর্যের ইউভিবি রশ্মি আটকাতে পারে না। অর্থাৎ মেঘলা দিনে বেশিক্ষণ বাইরে কাটালেও ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। তবে জানলার কাচ এই রশ্মি পুরোপুরি আটকে দেয়। ধোঁয়া বা ধোঁয়াশা এ রশ্মি আটকাতে পারে। পাহাড়ের বরফে বা সমুদ্রের ধারে বালিতে প্রতিফলিত হয়ে ইউভি রশ্মি ত্বকে পৌঁছায় বেশিমাত্রায়। তাই এসব স্থানে বেড়াতে গেলে সাবধান! ছাতা মাথায় বা মাথায় টুপি দিয়ে সূর্যরশ্মি আটকানো যেতে পারে কিছুটা, পুরোটা নয়।
সূর্যরশ্মির বিরুদ্ধে ত্বকের একটা সহ্যক্ষমতা জন্মে যায় অনেক সময়। এটি নির্ভর করে ত্বকে কতটা মেলানিন কণা আছে, এর ওপর। এছাড়া রোদে বের হলে ত্বক কতটা মেলানিন তাড়াতাড়ি তৈরি করতে পারবে, এর ওপরও নির্ভর করছে সূর্যরশ্মি রুখার ক্ষমতা। এটিকে বলে ‘ট্যান’ করার ক্ষমতা। তাই প্রখর রোদে বের হওয়ার আগে অবশ্যই ভেবেচিন্তে ব্যবস্থা নিয়েই বের হোন।