কষ্টের ঝড় উঠেছে। খুব জোরে ঝড় উঠেছে। পাঁজরে এত জোরে ধাক্কা মারছে যে কষ্টটা অর সহ্য হচ্ছে না। খুব…খুব কষ্ট! মনে হচ্ছে দমটা যেন বন্ধ হয়ে যাবে। এদিকে চোখটা ঝাপসা হচ্ছে। কী করি এখন। মনটা যে খারাপ আমার। কিছু করেই তো ঠিক হতে পাচ্ছি না। কয়েকজন বন্ধুকে ফোন করেছিলাম। খুব কাছের বন্ধু। ব্যস্ততার অজুহাতে দেখিয়ে ওরা ফোনটা রেখে দিল। এখন তো ঘরটা কাটতে আসছে আমায়। মনে হচ্ছে আজ আর পারবো না মনের সঙ্গে লড়তে। হার নিশ্চিত! আরে আরে দাঁড়ান বন্ধু। কী করছেন! হাতের কাছে একটু দই হবে? মন খারাপের সময় এক বাটি দই খেলেই কেল্লাফতে! মনের মধ্যে থাকা দুঃখের বিষ তো বেরবেই, সেই সঙ্গে মস্তিষ্কে বেশ কিছু রাসায়নিক ক্ষরণের কারণে নিমেষে মন ভাল হয়ে যাবে। মন এবং দইয়ের সম্পর্কটা আরও কত গভীরতা একবার জেনে নিই। তাহলে আর মনে কোনও সন্দেহ থাকবে না। দইয়ে উপস্থিত ল্যাক্টোব্যাসিলাস, সহজ কথায় উপকারি ব্যাকটেরিয়া শরীরে থাকা মাইক্রোবায়োমের চরিত্র এমনভাবে বদলে দেয় যে বিষন্নতা দূরে পালায়। এখানেই শেষ নয়, ডিপ্রেশন বা মন খারাপ তখনই হয়, যখন মস্তিষ্কে বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এক্ষেত্রেও দই বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। মন খারাপ করা হরমোনকে আক্রমণ করতে “ফিল গুড” হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ধীরে ধীরে মন খারাপ কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, পাকস্থলীতে উপস্থিত মাইক্রোবায়োম মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভাল-মন্দের সঙ্গে অতোপ্রতোভাবে জড়িত। তাই তো দই এবং মন বা মস্তিষ্কের সম্পর্কটাকেও অস্বীকার করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
দই এবং মন খারপের সম্পর্কটাকে আরও একটু গভীরে গিয়ে দেখা যাক। মন খারাপের সময় দেহে ল্যাক্টোব্যাসিলাসের পরিমাণ কমে যায়। ফলে কাইনুরেনাইন নামে একটি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যা স্ট্রেস লেভেলকে নিমেষে বাড়িয়ে দেয়। এই সময় যদি কোনও ভাবে শরীরে ল্যাক্টোব্যাসিলাসের মাত্রা বাড়ানো যায়, তাহলেই স্ট্রেস তো কমেই, সঙ্গে অ্যাংজাইটিও কমতে শুরু করে। আর একথা তো নিশ্চয় এতক্ষণে জেনে গেছেন যে দইয়ে প্রচুর পরিমাণে ল্যাক্টোব্যাসিলাস থাকার কারণ মন খারাপের প্রকোপ কমাতে দইয়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাহলে এবার দই খাবেন তো? নাকি এখনও মনে হচ্ছে আমি মজা করছি!
দইয়ের আরও কিছু উপকারিতার মধ্যে রয়েছে হাড়ের দৃঢ়তা বৃদ্ধি। এক কাপ দই খেলে দেহে প্রায় ৩০০ গ্রাম ক্যালসিয়ামের প্রবেশ ঘটে। এই পরিমাণ ক্যালসিয়াম যদি প্রতিদিন শরীর পেতে থাকে, তাহলে হাড় এত শক্তপোক্ত হয়ে ওঠে যে কোনো ধরনের হাড়ের রোগ ধারে কাছে ঘেঁষারও সুযোগ পায় না। নতুন বছরে ওজন কমানো যদি আপনার প্রথম এজেন্ডা হয়, তাহলে এখন থেকেই নিয়মিত দই খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার মিলবে। কারণ এই দুগ্ধজাত খাবারটিতে উপস্থিত একাধিক পুষ্টি উপাদান শরীরে জমে থাকা ফ্যাট সেলেদের গলাতে শুরু করে। ফলে ওজন কমতে একেবারেই সময় লাগে না। পাশাপাশি দইয়ে উপস্থিত পটাশিয়াম শরীরে প্রবেশ করার পর সোডিয়ামের আধিক্য কমাতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর ভূমিকা অনন্য। সুস্থভাবে দীর্ঘদিন যদি বাঁচতে চান, তাহলে প্রতিদিন দই খান! দইয়ের উপকারি ব্যাকটেরিয়া, পাকস্থলির কর্মক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি হজম ক্ষমতার উন্নতিতে এবং নানাবিধ পেটের রোগের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আপনি যদি খাদ্যরসিক হয়ে থাকেন, তাহলে রোজ একবাটি করে দই খেতে ভুলবেন না যেন!