মেথি একটি একটি ভেষজ মৌসুমী গাছ। মেথি সবাই চেনেন। মেথিকে মসলা, খাবার, পথ্য—তিনটিই বলা চলে। মেথির স্বাদ তিতা ধরনের। এর পাতা শাক হিসাবে খাওয়া হয়। মেথি শাক গ্রাম বাংলার মানুষের প্রিয় খাদ্য। ইউনানী, কবিরাজী ও লোকজ চিকিৎসায় মেথির বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। যুগ যুগ ধরেই মেথির বীজ নানা কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মশলা হিসাবেও এটি প্রচুর ব্যবহার হয়। এটি পাঁচ ফোড়নের একটি উপাদান। মেথি থেকে ষ্টেরয়েডের উপাদান তৈরি হয়।
এতে রয়েছে রক্তের চিনির মাত্রা কমানোর বিস্ময়কর শক্তি ও তারুণ্য ধরে রাখার বিস্ময়কর এক ক্ষমতা। যাঁরা নিয়মিত মেথি খান, তাঁদের বুড়িয়ে যাওয়ার প্রবণটা অত্যন্ত ধীর গতির হয়। অর্থাৎ বার্ধক্যকে দূরে ঠেলে দিয়ে তারুণ্যকে দীর্ঘস্থায়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে মেথি। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে চিবিয়ে মেথি খেলে অথবা এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি খেলে শরীরের রোগ-জীবাণু মরে যায় বলে জানা যায়, বিশেষত কৃমি মরে, রক্তের চিনির মাত্রা কমে। রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা কমে যায়।
ঐতিহ্যগতভাবেই মেথি বীজ ব্যবহৃত হয়ে আসছে ভালো স্বাস্থ্য ও শক্তিশালী চুলের জন্য। সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে যে মেথির উপকারিতা আরো অনেক বেশি আছে। এই গরমে ত্বকে যে ঘা, ফোড়া, গরমজনিত ত্বকের অসুখ হয়, এই অসুখগুলো দূর করে মেথি। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, যে ডায়াবেটিক রোগীরা নিয়মিত মেথি খান, তাঁদের ডায়াবেটিসজনিত অসুখগুলো কম হয় এবং স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম। মেথি বীজের নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতার বিষয়েই জানবো আজকের ফিচারে।
মেথি দেখতে কেমন
মেথি দেখতে মেথির মত। তবে মেথিকে দেখতে অনেকটা মুগ ডালের মত ছোট সাইজের। দেখে এই পার্থক্য মনে হবে যে মেথিকে বোধহয় কেউ ইচ্ছামত পিটাইছে। মানে মেথির শরীর অমসৃণ।
মেথির উপকারিতা
মেথি দেখতে এতটা সুন্দর না হলে মেথির উপকারিতা‘র লিস্ট অনেক বড়। মেথির গুণাগুণ দেখলে একে অন্যতম সুপারফুড বলা চলে। আসুন স্বাস্থ্যবিষয়ক মেথির উপকারি দিকগুলো জেনে ফেলি।
১. ওজন কমাতে সহায়ক
মেথি প্রাকৃতিক ফাইবার থেকে জন্ম নেয়। এতে রয়েছে ওজন কমানোর বৈশিষ্ট্য। প্রাকৃতিক আঁশে ভরপুর মেথি খাওয়ার পর তা পেটে গিয়ে ফুলে যায়। আর এই আঁশ ওটের মত হজমে সময় নেয় আর তাই ক্ষুদা কম অনুভূত হয়। এ প্রক্রিয়ায় ওজন কমাতে সহায়তা করে মেথি। খুব বেশি নয়, সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন সামান্য মেথি চিবিয়ে খেয়ে দেখতে পারেন। কয়েক দিন পরেই এর উপকার পাচ্ছেন বলে মনে হবে। স্থুলতা কমাতে প্রতিদিন সকালে মেথি ভেজানো পানি পান করা যেতে পারে। দু’টি গ্লাসে পানি নিয়ে এক টেবিল চামচ করে মেথি সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খেয়ে ফেলুন। মেথি ভেজানো পানি পেটের গ্যাসের সমস্যাও দূর করে।
২.কোলেস্টেরল কমাতে
মেথিতে রয়েছে স্টেরিওডাল সেপোনিনস নামক একটি উপাদান। এই উপাদানটি মানুষের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর তাই মেথি ভেজানো পানি পান করলে হঠাৎ হার্টের আর্টারি আটকে গিয়ে হঠাৎ করে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।
৩. হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে
কার্ডিওভাস্কুলার স্বাস্থ্যের উপর তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে মেথি বীজ। মেথিতে গ্লেকটোম্যানান নামক একটি উপাদানের খোঁজ পাওয়া গেছে । এই উপাদানটি হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। একই সাথে এই উপদানে উপস্থিত পটাশিয়াম, রক্তে লবনের পরিমাণ কমায়। ফলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে হার্ট অ্যাটাক এবং অন্যান্য হৃদ রোগ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা একেবারে শূন্যের কোটায় এসে দাঁড়ায়। কোন কারনে হার্ট এটাক হলে অ্যাটাকের সময় যে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হয় তার বিরুদ্ধে কাজ করে মেথি বীজ।
৪. ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ
রক্তে ধীরে ধীরে জমতে থাকা টক্সিক উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরের ক্যান্সার কোষ জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। আর এখানেই মেথি বীজের উপকারি ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। মেথি রক্তে ভেসে বেড়ানো টক্সিক উপাদানগুলোকে শরীর থেকে বার করে দেয়। ফলে ক্যান্সার কোষ জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনাই কমে যায়। বিশেষ করে স্তন ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য মেথি কার্যকর। মেনোপজ হলে নারীর শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে। হরমোনের এই পরিবর্তনের কালে মেথি ভালো একটি পথ্য।
৫. সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিক রোধে
কম বয়সেই ব্লাড সুগার যদি ঊর্ধমুখি থাকে তাহলে নিয়মিত মেথি ভেজানো পানি খাওয়া উচিত। এমনটা করলে শরীরে গ্লেকটোমেনানের পরিমাণ বাড়তে থাকে, যা শর্করার শোষণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ফলে সুগার লেভেল বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। র অ্যামাইনো এসিড অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন ক্ষরণে সহায়তা করে। এতে দেহে গ্লোকোজের পরিমাণ হ্রাস পায়। যে কারণেও ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। রক্তে চিনির মাত্রা কমানোর অসাধারণ এক শক্তি থাকায় ডায়াবেটিস রোগের জন্য খুব ভালো মেথি। এর ফলে ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে থাকে।
টাইপওয়ান ডায়াবেটিক যাদের, তাদের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৫০ গ্রাম করে মেথি দিনে দুবার খাওয়ার কথা বলেন আয়ুর্বেদিকরা। টাইপ টু ডায়াবেটিক যাদের তাদের জন্য ২.৫ গ্রাম করে মেথির গুঁড়ো দিনে দু’বার টানা তিন মাস খেলে উপকার পাবার কথা জানা যায়।
৬. হজমের সহায়ক
বাঙ্গালী ভোজন রসিক জাতি হিসেবে পরিচিত তাই পেটের পীড়া আমাদের স্বাভাবিক একটা সমস্যা। অন্ত্রের নড়াচড়া বৃদ্ধি করে মেথি। যাঁদের পেট জ্বালা বা হজমে সমস্যা আছে, তাঁরা নিয়মিত মেথি খেতে পারেন। হজমে সমস্যা এবং বুক জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে সহায়ক মেথি। বুকে বা পেটের ওপরের দিকে এসিডের প্রদাহ থেকে মুক্তি দেয় মেথি। সেই সঙ্গে বদহজমের সমস্যায় ওষুধের মতো কাজ করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এ সবই দেহের বিষাক্ত উপাদানগুলোকে বের করে দেয়। এমন কি পেপটিক আলসার সারিয়ে তোলার যোগ্যতা রাখে। উপকার পেতে নিয়মিত সকালে খালি পেটে মেথি ভেজানো পানি খেলে কনস্টিপেশনের সমস্যাও অনেকাংশে দূর হয়।
৭. খুশকির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় খুশকি হওয়া খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। শীত-মৌসুমে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে খুশকির সমস্যা বৃদ্ধি পায়। খুশকি দূর করার জন্যে আমরা নানা উপায় অবলম্বন করি। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো এবং কার্যকরী উপায় হচ্ছে মেথি বীজ ব্যবহার করা। ড্রাই স্কাল্প এবং ডারমাটাইটিস নিরাময়েও অনেক কার্যকরী মেথি বীজ। ১ কাপ পানিতে ২ টেবিল চামচ মেথি বীজ দিয়ে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে এই মেথি বীজ ভালো করে পেস্ট করে নিন। মেথির পেস্ট চুলের গোড়ায় ও মাথার তালুতে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে এর সাথে খানিকটা টক দই মিশিয়ে নিতে পারেন এতে আরো ভাল ফল পাবেন।
৮. চুল পড়া রোধে
স্বাস্থ্যহীন চুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে দেয় মেথি। চুল পড়া রোধে বহুকাল ধরে মেথির কদর চলে আসছে। বিস্ময়কর উপকারিতা মিলবে। মেথি চুলের গোড়া মজবুত করতে সহায়তা করে।এটি খেতেও পারেন, বা বেটে মাথায় দিতে পারেন, দুভাবেই উপকার পাওয়া যাবে। চুল পড়া ঠেকাতে মেথি খেলে উপকার পাওয়া যায়। মেথি সেদ্ধ করে সারা রাত রেখে তার সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়ে নিয়মিত মাথায় মাখলে চুল পড়া কমে।
মেথিতে রয়েছে একপ্রকার হরমোন যা চুলের বৃদ্ধি ঘটায় আর হেয়ার ফলিকলকে মজবুত রাখে।এছাড়াও মেথিতে রয়েছে নিকোটিন অ্যাসিড ও লেসিথিন নামক দু’টি উপাদান যা পাতলা চুল ঘন করতে সাহায্য করে।এছাড়াও মেথিতে আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুনাগুণ,যা স্ক্যাল্প বা মাথার চামড়ার ইনফেকশন রোধ করে আবার মেথি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসাবেও কাজ করে।
৯. জ্বর ও খুসখুসে গলার জন্য
আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শরীর ভেঙেছে মনে হচ্ছে? সেই সাথে জ্বরের প্রকোপে যে বিছানা ছাড়তে পারছেন না ? তাহলে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে এক টেবিল চামচ মেথি চিবিয়ে খেলে জ্বর থেকে মুক্তি মেলে। মেথিতে থাকা বেশ কিছু উপকারি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে যে জ্বরের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। সর্দি-কাশি সারাতেও এই ঘরোয়া চিকিৎসাটির কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। এতে রয়েছে মুসিলেজ নামের এক ধরনের যৌগ, যা গলার খুসখুসে ভাব দূর করে। এতে রয়েছে বৃক্ষজ আঠাজাতীয় উপাদান আর এতে এক ধরনের ভেষজ উপাদান থাকে যা গলা ব্যথা উপশমে সহায়তা করে।
১০. উজ্জ্বল ত্বকের জন্য
রূপচর্চায়ও মেথিকে শীর্ষে রাখা যায়। মেথি ত্বকের বয়সের ঝাপ দূর করতে, ব্রণের সমস্যা কমাতে এবং কালো দাগ কমাতে সাহায্য করে। সারা দেহে বয়ে বেড়ানো নানা ক্ষতিকর উপাদান চেহারায় বলিরেখা ফেলে দেয়। এ ছাড়া চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল সৃষ্টিতেও ওস্তাদ এগুলো। মেথি দেহের এ সব অপ্রয়োজনীয় উপাদান ঝেঁটিয়ে বিদায় করে। তাছাড়া ত্বকের পোড়াভাব দূর করে উজ্জ্বলতা ফেরাতেও সহায়তা করে এই বীজ।
১১. ব্রণ রোধে
মেথি বীজ ব্রণের বিস্তারকে প্রতিরোধ করে। ত্বকের এপিডারমিস স্তরে জড়ো হওয়া বিষাক্ত উপাদানকে বের করে দেয়। এছাড়াও ব্রণের দাগকে হালকা করতে এবং পোড়াদাগ দূর করতেও মেথি বীজ ব্যবহার করা হয়। মেথি বীজ পেস্ট করে তার সাথে মধু যোগ করে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট মুখের ব্রণের উপর লাগিয়ে সারারাত রাখুন এবং সকালে কুসুম গরম পানি দেয়ে ধুয়ে ফেলুন। কয়েক দিন .টানা লাগালে পার্থক্যটা দেখতে পাবেন।
১২. সন্তান জন্মদানকে কিছুটা সহজ করতে
নারীদের স্বাস্থ্যগত বিষয়েও এর উপকারিতা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মেয়েদের জরায়ুর সংকোচন ও প্রসারণের যন্ত্রণা কমাতে মেথির ভূমিকা রয়েছে বলে মত দিয়েছেন। তবে অতিরিক্ত খাওয়া হলে গর্ভপাত বা অপরিণত শিশুর জন্মদানের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। মেথিতে রয়েছে সাইটো-ইস্ট্রোজেন, যা নারীদেহে প্রোলাকটিন নামের হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটায়। এই হরমোন নারীদেহকে সুগঠিত করে। এ ছাড়া ঋতুকালীন বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয় মেথি।
১৩. বুকের দুধ বাড়াতে
মাতৃদুগ্ধ বাড়াতে ওষুধের বিকল্প হলো মেথি তাই সদ্য মা হওয়া নারীর জন্য মেথি উপকারী। বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশে নারীরা বাচ্চা সন্তান জন্ম দানের পর বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য মেথি বীজ গ্রহণ করে থাকেন। যে মায়েরা তাদের সন্তানদের দুধ পান করান মেথি বীজে থাকা ফাইটোইস্ট্রোজেন তাদের বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করে । মেথি বীজের চা পান করলে মায়েদের বুকের দুধের পরিমাণ যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি শিশুর ওজন বৃদ্ধিও পায়।
১৪. কৃমি রোধ
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি সকাল বেলা পান করলে শরীরের রোগ-জীবাণু মরে। রোগ জীবাণুর মধ্যে বিশেষত উল্লেখযোগ্য হল কৃমি।
১৫. বাত রোগ
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বাত রোগ জেপে বসে। মেথির একটি বড় গুণ হলো এই বাতরোগ নিরাময়। বিভিন্ন ধরনের বাতরোগ নিরাময়ের জন্য মেথির ব্যবহার সেই প্রচীনকাল থেকেই চলে আসছে। ৪ গ্রাম পরিমাণ মেথি এবং সমপরিমাণ শুকনো আদা চূর্ণ পরিমাণ মতো গুড়ের সাথে মিশিয়ে খেলে অল্প দিনের মধ্যেই গেঁটেবাত সেরে যায়।
১৬. আমাশয় রোধে
আমাদের অঞ্চলে আমাশয় একটি সাধারন রোগ। এ ক্ষেত্রে মেথিগুঁড়ো ঘোলের সাথে গুলিয়ে খেতে হয়। আর দইয়ের সাথে খেলে রক্ত আমাশা সেরে যায়। মেথি খেলে লিভার ভালো থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
মেথি কিভাবে খাবেন বা ব্যবহার করবেন?
১. বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাতে পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি পান করা হয়। ওজন কমাতে, হৃদ যন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি, হজম শক্তির বৃদ্ধি, হজম শক্তি বৃদ্ধি, কৃমি রোধে রাতের বেলা গ্লাসে মেথি ভিজিয়ে সেই পানি পারলে উপকার পাওয়া যায়।
২. আমশয়ের ক্ষেত্রে মেথি গুড়া করে গুলের সাথে খেতে হবে। আর যদি রক্ত আমাশয় হয় সে ক্ষেত্রে দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।
৩. বাতের ক্ষেত্রে ৪ গ্রাম পরিমাণ মেথি এবং সমপরিমাণ শুকনো আদা চূর্ণ পরিমাণ মতো গুড়ের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন অল্প পরিমানে খেলে উপশম হয়।
৪. জ্বর- ঠান্ডাতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে এক টেবিল চামচ মেথি চিবিয়ে খেলে জ্বর বা ঠান্ডার প্রকোপ কমে আসে।
৫. টাইপওয়ান ডায়াবেটিক যাদের, তাদের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৫০ গ্রাম করে মেথি দিনে দুবার খেতে হবে আর যাদের টাইপ টু ডায়াবেটিক তারা ২.৫ গ্রাম করে মেথির গুঁড়ো দিনে দু’বার টানা তিন মাস খেলে উপকার পাবার কথা জানা যায়।
৬. নানা কারনে মেথি খেলে মনে রাখতে হবে ৬ মাসের বেশি মেথি খাওয়া চলবে না। কারণ, বেশি মেথি খেলে কিছু সাইড এফেক্ট হতে পারে। যেমন, ডায়ারিয়া, গ্যাস বা পেটের গন্ডগোল ইত্যাদি।
৭. ত্বকের উজ্জলতা ও ব্রণ রোধে মেথি বেটে সেটি মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে।
৮. খুশকি রোধে ১ কাপ পানিতে ২ টেবিল চামচ মেথি বীজ সারারাত ভিজিয়ে রাখুন সেই পেটে মাথায় দিলে খুশকি থেকে বাঁচা যায়। আপনি চাইলে চুলের উপকারিতার জন্যে মেথির তেল ব্যবহার করতে পারেন। আপনি চাইলে মেথি বাটার সঙ্গে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মেস্থাতে পারেন । মিশ্রণটি মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। অতিরিক্ত খুশকির সমস্যা হলে ৩-৪ টেবিল চামচ টক দইয়ে ২-৩ চা চামচ মেথি দিয়ে আগের রাতে ভিজিয়ে রাখুন সারারাত। পরদিন সকালে ব্লেন্ড করে মাথার ত্বকে লাগান। দূর হবে খুশকি।
৯. চাইলে মেথির তেল ব্যবহার করতে পারেন। বেশ খানিকটা নারকেল তেল নিয়ে এতে মেথি দিন। এবার মেথি সহ এই তেলটা উত্তাপে ফোটান। ভালোভাবে ফোটাতে থাকুন যতক্ষণ না মেথির দানা লাল হয়ে যায়।মেথির দানা লাল হয়ে গেলে নামিয়ে নিন।এবার মেথির দানা একটু চিপে,তেল থেকে বাদ দিয়ে দিন। হয়ে গেল মেথির তেল। একটি মুখ বন্ধ বোতলে এই তেল রেখে ব্যবহার শুরু করুন। গোসলের একঘণ্টা আগে বা আগের দিন রাতে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। খুব চুল ওঠার সমস্যা হলে এ তেল সপ্তাহে তিনদিন লাগান।না হলে সপ্তাহে দুদিন লাগালেই উপকার পাওয়া যাবে।
শেষ কথা
মেথি বীজ বহুমুখী গুণ সম্পন্ন মসলা যা বিভিন্ন প্রকার রান্নায় ব্যবহার করা হয়। নানাবিধ ঔষধি গুণাগুণের চাইতেও সুগন্ধের জন্য বেশি পরিচিত মেথি। আকারে যতই ক্ষুদ্র হোক, এর গুণাগুণ অপরিসীম। নানা ধরনের শাক-সবজি রান্না সুস্বাদু করে তুলতে মেথি দানা তো ব্যবহার করা হয়ই। কিন্ত আলাদা করেও অনেক উপকারিতা রয়েছে। মেথি দানা ব্যবহার করে ঘরোয়া টোটকাতেই অনেক রোগ সারিয়ে নেওয়া যায়