কোনো অনুষ্ঠানে খাওয়ার টেবিলে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব হয়তো সবাই একসঙ্গে খেতে বসেছেন। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে দু-একটা কথাও বলছেন। এমন অবস্থায় কেউ যদি খাবার চিবানোর শব্দ করে তবে অনেকেই বিরক্ত হয়। এটা যেমন বদভ্যাস, তেমনই খাবার প্লেটে হাত দিয়ে অহেতুক শব্দ করাও অভদ্রতার মধ্যে পড়ে। পরিবারের সদস্যরা হয়তো আপনার সমস্যার কথা জানেন, তাঁরা হয়তো মেনেও নিয়েছেন। কিন্তু অনেকেই আপনার এমন আচরণে বিরক্ত হবেন। আপনার আদবকেতা নিয়ে প্রকাশ্যে, নিদেনপক্ষে মনে মনে প্রশ্ন তুলবেন। অথচ আপনি নিজে চাইলেই এমন অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মেখলা সরকার জানালেন এ থেকে পরিত্রাণের উপায়। তিনি বলেন, ‘এর জন্য দরকার একটু সচেতনতা, একটু অনুশীলনের। মনোযোগ দিয়ে খেতে হবে।’
করতে হবে অনুশীলন
যেকোনো বদভ্যাস দূর করতে হয় দুটি ধাপে। প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনার এই অভ্যাসটি খারাপ। সামনে বসা মানুষটি হয়তো এ জন্য বিরক্ত বোধ করছেন। নিজের মধ্যে এই বোধ জাগ্রত হওয়া ছাড়া এ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব না। তবে এতে বিমর্ষ হয়ে পড়বেন না। নিজেকে ছোট মনে করবেন না। বরং নিজেকে উন্নয়নের একটা সুযোগ মনে করুন, চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে পারেন। পরবর্তী সময়ের কাজ অভ্যাসটি দূর করা। এ জন্য দরকার ইচ্ছাশক্তির। মহাশূন্যে রকেট পাঠানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ যেমন সফল উড্ডয়ন। একইভাবে কোনো কাজে দৃঢ় সংকল্প হলে অনুশীলনের তাগাদা নিজে থেকেই অনুভব করবেন।
এ ক্ষেত্রে যা হয়, সাধারণত মুখ খোলা রেখে খাবার চিবালে শব্দ হয়। মুখ বন্ধ করে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। মুখ বন্ধ রেখে খাওয়াটা ভদ্রতার মধ্যেই পড়ে। তবে হুট করে একদিনে এই অভ্যাস গড়ে তোলা সম্ভব না। দীর্ঘদিন ধরে ধীরে ধীরে অনুশীলন করলে একসময় নিজেই অবাক হয়ে দেখবেন—খাবার চিবানোর সময় আর মুখ খোলা থাকছে না। কয়েকটি ধাপে অনুশীলনের কাজটা করতে পারেন।
প্রথমে চুইংগাম দিয়ে শুরু করতে পারেন। সামনের না বরং মাড়ির দাঁতগুলো দিয়ে চিবান। মুখ অবশ্যই বন্ধ রাখবেন। শ্বাসপ্রশ্বাসের কাজটা নাক দিয়ে সারতে হবে, মুখ দিয়ে নয়। তবে চুইংগাম দাঁতের জন্য ক্ষতির হতে পারে। তাই একটু খুঁজে বেছে চিনি ছাড়া চুইংগাম কিনুন।
অল্প অল্প করে খাবার মুখে দিন। সেই একই নিয়ম, মুখ বন্ধ করে পেছনের দাঁতগুলো দিয়ে চিবান। নরম খাবার দিয়ে শুরু করতে পারেন। অভ্যাস গড়ে উঠতে শুরু করলে, স্বাভাবিক পরিমাণে খাবার মুখে দিয়ে একইভাবে অনুশীলন করতে থাকুন। এরপর ফলমূল এবং অপেক্ষাকৃত শক্ত খাবার। মাঝেমধ্যে মুখ বন্ধ রেখে খেতে ভুলে গেলে ঘাবড়ে যাবেন না। কোনো অভ্যাসই একদিনে গড়ে ওঠে না, একদিনে পাল্টানোও যায় না। দরকার দীর্ঘ সময়ের চেষ্টা। সে চেষ্টাটাই করুন।
মনোযোগ রাখুন খাবারে
খাবার সময় টিভি দেখা, কম্পিউটারের মনিটরে চোখ বা বই পড়া থেকে বিরত থাকুন। খাবারটা মনোযোগের সঙ্গে খান, মনোযোগটা রাখুন সেখানেই। এতে শব্দ করে খেলে নিজের কানেই সে শব্দ বেমানান ঠেকবে। নিজেই সচেতন হয়ে উঠবেন।
চাই সহযোগিতা
সমস্যা কাটিয়ে উঠতে নিজের চেষ্টা যেমন দরকার, তেমনি দরকার কাছের মানুষদের সহযোগিতাও। রাগ করে বা কাউকে ছোট করে কিছু বলা না, বরং স্বাভাবিকভাবে মনে করিয়ে দিতে হবে। অর্ণব দত্তকে যেমন সাহায্য করেছেন তাঁর মা। অর্ণব বলেন, ‘আমি আগে শব্দ করে খেতাম। আমার মা তা লক্ষ্য করে খাওয়ার সময় আমাকে শুনিয়ে তিনিও শব্দ করে খাওয়া শুরু করলেন। একসময় বিরক্ত হয়ে মাকে শব্দ না করে খেতে বললাম। মা সেটা করলেন। এরপরই বুঝতে পারি যে আসলে আমি নিজেই শব্দ করি।’ এরপর অর্ণব তাঁর মাকে বলেছিলেন, প্রত্যেকবার শব্দ করে খাওয়ার সময় যেন তাঁকে মনে করিয়ে দেন তিনি।