পেলাব, মাখনমসৃণ ত্বকের স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু ব্রণ, অ্যাকনে, ব্ল্যাক হেডস, বলিরেখা, ডার্ক সার্কেল, কালো দাগছোপের ঠেলায় সুন্দর ত্বকের স্বপ্ন অধরাই থাকছে।
কখনো চুল দিয়ে, কখনো বা স্কার্ফ দিয়ে ঢাকার চেষ্টা, কখনো আবার নিজেই খাটের তলায়। বিজ্ঞাপনটা মনে পড়ে নিশ্চয়ই। একটা ব্রণ ঢাকতে কতই না লোকোচুরি। আসলে সুন্দর, সুস্থ ত্বক তো আমরা সবাই চাই, কিন্তু পাই আর কোথায়! কারো কারো ত্বক নির্জীব তো করো একটুতেই দেখা যায় র্যাশ। ব্রণ, ফুসকুড়ি, ব্ল্যাক হেডস তো লেগেই আছে। পলিউশন, ধোঁয়া, ধুলো, স্ট্রেস, আধনিক লাইফস্টাইল যে কিভাবে ত্বকের বারোটা বাজাচ্ছে তা আপনারা ভালোই জানে। সুন্দর ত্বকের লোভে অনেকেই আবার বিজ্ঞাপনী চমকে উৎসাহিত হয়ে বাজারি ক্রিম, লোশন বাগিতে জমা করে ফেলেছেন। কাজও হয়তো পেয়েছেন। কিন্তু হাতের কাছে মজুত ঘরোয়া উপকরণে যদি ব্রণ, অ্যাকনে, পিগমেন্টশনম, ব্ল্যাক হেডসের মতো সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তা হলে আর অপেক্ষা কেন! নিজের ত্বককে দিন বেস্ট কেয়ার।
ব্রণ
সাধারণত তৈলাক্ত ত্বকে বা মুখের সে সব অংশে তেল নিঃসরণ বেশি হয়, সেইসব জায়গায় ব্রণ দেখা দেয়। তাই ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সবার আগে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করুন। দিনে অন্তত দু’বার মেডিকেটেড সাবান দিয়ে মুখ ধোবেন। এরপর গোলাপ জল ও অ্যাষ্ট্রিনজেন্ট লোশন সমপরিমাণে তুলায় নিয়ে সারা মুখ ভালো করে মুছে নিন। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব কামাতে সাহায্য করবে। ফলে ব্রণও কম হবে। যেহেতু তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের সমস্যা বেশি হয়, তাই যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। ব্রণ সারাতে দারুচিনিগুঁড়ো, লেবুর রস ও সামান্য মধু একসঙ্গে মিশিয়ে ব্রণের উপর লাগিয়ে নিন। এক ঘন্টা অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত কিছুদিন লাগালে দেখবেন, ব্রণের সমস্যা কমে যাবে। রাতে শুতে যাওয়ার আগে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করে নিন। তারপর চন্দনবাটা ব্রণের উপর লাগিয়ে নিন। পরেরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন। এক সপ্তাহ রোজ লাগিয়ে দেখুন উপকার পাবেনই। ব্রণ সারাতে নিমপাতা খুব কার্যকর। নিমপাতা সামান্য পানিতে ফুটিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে ছেঁকে বোতলে ভরে রাখুন। প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর এই নিমপাতার পানি দিয়ে মুখ ধুতে পারেন। নিমপাতা টেটে ব্রণের উপর লাগিয়ে নিন। আধঘন্টা পর পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। নিমপাতার অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান ব্রণের হাত থেকে সহজেই রেহাই দেবে। রসুন থেঁতো করে ব্রণের উপর লাগাতে পারেন। ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। হাতেনাতে ফল পাবেন।
‘‘তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মুলতানি মাটি খুব ভালো। সপ্তাহে তিনদিন মুলতানি মাটির সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব কমে যাবে।’’
ব্ল্যাকহেডস
ব্ল্যাকহেডস কমাতে বেকিং সোডা দিয়ে তৈরি স্ক্রাবার দারুন ভালো ফল দেয়। দু’চামচ বেকিং সোডা সামান্য জলে মিশিয়ে ব্ল্যাকহেডসের উপর লাগিয়ে নিন। আধশুকনো হলে হালকা হাতে সার্কুলার মুভমেন্টে কিছুক্ষণ ঘষে কুসুম গরম পানি দিয়ে আধঘন্টা রেখে হালকা মাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। ব্ল্যাকহেডস কমে যাবে।
অ্যাকনে
নানা কারণেই অ্যাকনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, অ্যানড্রোজেন হরমোন বেড়ে গেলে ত্বকে তৈলগ্রন্থির সংখ্যা বেড়ে যায়, ফলে অ্যাকনে দেখা দেয়। অনেক সময় আবার অ্যাকনে বংশগত কারণেও হয়। তাই ঠিক কী কারণে অ্যাকনে হচ্ছে, তা আগে জানা দরকার। অ্যাকনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এক টেবিলচামচ স্কিমড মিল্কের সাথে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে অ্যাকনের উপর লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ভিজে তুলো দিয়ে মুছে নিন। একভাগ অ্যাপল সিডার ভিনিগারের সাথে তিনভাগ পানি মিশিয়ে তুলোয় নিয়ে অ্যাকনের উপর লাগান। কিছুদিন লাগিয়ে দেখুন না উপকার পাবেন।
পিগমেন্টেশন
পিগমেন্টেশনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চালের গুঁড়ো, টক দই, আমন্ডগুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে স্ক্রাবার তৈরি করে নিন। সপ্তাহে দু’দিন এই স্ক্রাবার মুখে (বিশেষ করে ডার্ক স্পটগুলোর উপর) লাগিয়ে নিন। হালকা হাতে সার্কুলার মুভমেন্টে কিছুক্ষণ ঘষুন। কয়েক মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এর পাশাপাশি সপ্তাহে দু’দিন পাকা পেঁপের সঙ্গে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পিগমেন্টেশনের সমস্যায় এই মাস্ক ম্যাজিকের মতো কাজ করে। দেখবেন, পিগমেন্টেশন আগের চেয়ে অনেক হালকা হয়ে যাবে। ত্বকের জেল্লাও বাড়বে। রোদও কিন্তু পিগমেন্টেশনের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে একাই একশো তাই রোদে বাইরে বেরোনোর অন্তত ২০ মিনিট আগে উচ্চ এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন ।
র্যাশ
র্যাশ সারাতে চন্দনবাটা অব্যর্থ। র্যাশের সমস্যায় চন্দনবাটার সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে র্যাশের উপর লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত লাগালে উপকার পাবেন। এছাড়া নিমপাতা পানিতে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে সেই পানি তুলোয় নিয়ে র্যাশের উপর লাগাতে পারেন। র্যাশ কমে যাবে। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলও র্যাশের উপর লাগাতে পারেন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে মুখ পরিষ্কার করে অ্যালোভেরা জেল লাগান। অ্যালোভেরা ত্বক ঠান্ডা করে। শুধু তাই নয়, র্যাশ কমাতেও সাহায্য করে।
বলিরেখা
বলিরেখার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ক্লিনজিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিং-এর মতো প্রাথমিক নিয়মগুলো মেনে চলুন। দিনের বেলা বাইরে বেরনোর আগে অবশ্যই মুখে, গলায় ও ঘাড়ে সানস্ক্রিন লাগাবেন। একটা শসা কুরে নিন। এর সঙ্গে আধ কাপ টক দই, আধকাপ ওটমিল ও সামান্য মধু ভালো করে মিশিয়ে মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এই মাস্ক বলিরেখা কমাতে ভিষণ উপকারী। ওটমিল স্ক্রাবার হিসাবে কাজ করবে। মধু ও দই ত্বককে ময়শ্চারাইজড করবে, বলিরেখা কমে যাবে।
ডার্ক সার্কেল
অপুষ্টি, স্ট্রেস, অপর্যাপ্ত ঘুম, সান সেনসিটিভিটি বা বংশগত কারণেও অনেকসময় ডার্ক সার্কেলের দেখা দিতে পারে। এগুলোর মধ্যে ঠিক কোন কারণে আপনার ডার্ক সার্কেলের সমস্যা দেখা দিয়েছে সেটা প্রথমে জেনে নিন। ডার্ক সার্কেলের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়ার সময় আঙ্গুলে সামান্য আমন্ড অয়েল নিয়ে দু’চোখের চারপাশে লাগিয়ে নিন। হালকা হাতে এক মিনিট কের মাসাজ করুন। তবে মাসাজ করার সময় যেকোনো একদিকে মাসাজ করবেন। ১৫ মিনিট রেখে ভিজে তুলো দিয়ে মুছে নিন। এর পাশাপাশি আরো কয়েকটা ঘরোয়া উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। সমপরিমাণে আলুর রস ও শসার রস একসঙ্গে নিয়ে চোখের নীচে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। কাজের ফাঁকে যখন একটু সময় পাবেন তখন ঠান্ডা গোলাপ জলে তুলো ভিজিয়ে বন্ধ চোখের উপর রেখে রিল্যাক্স করুন। দেখবেন চোখের ক্লান্তিভাব নিমেষে দূর হয়ে যাবে। ডার্ক সার্কেলের সমস্যাও কমবে।
‘‘ নির্জীব ত্বকের জেল্লা বাড়াতে সপ্তাহে দু’দিন ওটমিলের সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে মুখে লাগান।’’
ফেশিয়াল হেয়ার
অনেকেরেই ফেশিয়াল হেয়ার বেশি হয়। এর ফলে দেখতে বিশ্রী লাগে। এই সমস্যার মোকাবিলাতে বাড়িতে চিনি, লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। যে সমস্ত জায়গাগুলোতে হেয়ার গ্রোথ বেশি। সেখানে ভালো করে লাগিয়ে নন। শুকিয়ে গেলে ভিজে হাতে ঘষে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে এক বা দু’দিন এটা ট্রাই করতে পারেন। এর পাশাপাশি হলুদগুঁড়ো, দুধের সরের সঙ্গে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে লাগিয়ে নিন। আধশুকনো হলে হালকা হাতে সার্কুলার মুভমেন্টে কিছুক্ষণ ঘষুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে আপনার ফেশিয়াল হেয়ার গ্রোথ আগের চেয়ে অনেক কমবে।
সান স্পট
অতিরিক্ত সময় রোদে থাকলে সান স্পটের সমস্যা দেখা যায়। পাতিলেবুর রস, পাকা পেঁপের ক্বাথ মিশিয়ে দাগের উপর লাগিয়ে নিন। আধঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। সান স্পট কমাতে টমেটোর রসও দারুণ কার্যকর। এছাড়া সানস্পট রিমুভ করতে অ্যালোভেরা জেলও লাগাতে পারেন। হলফ করে বলতে পারি, উপকার পাবেন।