জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে সবই সৃষ্টিকর্তার উপর। আর যেকোনো নারীর জন্যই মা হওয়াটা পরম সৌভাগ্যের। আর যে নারীর সন্তান হয় না, একমাত্র তিনিই বুঝতে পারেন সন্তান না হওয়ার যন্ত্রণা ব্যাথা কি। অপরদিকে, সৃষ্টিকর্তা কোনো কোনো নারীর আবার যমজ সন্তান লাভের সৌভাগ্য দান করে থাকেন। আর ওই নারীদের আনন্দের পরিমাণ যেন দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তবে যমজ সন্তানের ব্যাপারে কিছু চমক প্রদত্ত তথ্য রয়েছে।
কোন মহিলাদের যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, চলুন জেনে নিই অজানা সেই চমক প্রদত্ত কিছু তথ্য-
১. যে সকল নারী লম্বা তাদের যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। আইজিএফ প্রোটিন লম্বা নারীদের দেহে বেশি থাকে যা যমজ সন্তান হতে সাহায্য করে।
২. একটি সমীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, যমজ সন্তানদের মায়েরা অনেকদিন বেঁচে থাকেন।
৩. যে সব নারীরা দুগ্ধজাত দ্রব্য বেশি খেয়ে থাকেন, তাদের যমজ সন্তান হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
৪. একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিশ্বের ৪০% যমজ সন্তানের জন্ম আফ্রিকাতে। ওই সমীক্ষা এমনটিই বলছে।
৫. যমজ সন্তানদের হাতের ছাপ একেবারেই আলাদা। যদিও তাদের জিনের বৈচিত্র এক, তবুও হাতের ছাপ আলাদা।
৬. অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রায় ২২% যমজ সন্তানেরা বাঁ-হাতি হয়।
৭. এ ব্যাপারে একটি সমীক্ষা বলছে, যমজ শিশুরা নিজেদের মধ্যে একটি বিশেষ ভাষাতে কথা বলে, যা কিনা একমাত্র তারাই বুঝতে পারে।
গর্ভে যখন যমজ শিশু । কিছু জরুরী বিষয়:
যমজ সন্তান হলো একই গর্ভধারনে সৃস্ট দুটি সন্তান।যমজ মনোজাইগোটিক (“অভিন্ন”) হতে পারে, অর্থাৎ তারা একটিমাত্র জাইগোট থেকে বড় হতে পারে পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটি এমব্রায়োস গঠন করে, অথবা ডিজাইগোটিক (“ভ্রাতৃসম”), অর্থাৎ তারা আলাদা ডিম্বক থেকে বড় হয়, প্রত্যেকটি নিষিক্ত হয় আলাদা শুক্রানু দ্বারা। যমজ সন্তান কেন হয়? এ নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। গর্ভে একের অধিক সন্তান ধারণ করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অনেক ক্ষেত্রে বংশগত কারণে এটি হতে পারে। এটি প্রকৃতি প্রদত্ত বা গড গিফটেড বলা যেতে পারে। দুই রকমের যমজ সন্তান হতে পারে।
অভিন্ন যমজ শিশু (আইডেন্টিক্যাল টুইন):
একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু প্রথমে দুইটি পৃথক কোষে বিভক্ত হয়। পরবর্তীতে প্রতিটি কোষ থেকে একেকটি শিশুর জন্ম হয়। এভাবেই অভিন্ন যমজ শিশুর (আইডেন্টিক্যাল টুইন) জন্ম হয়। এখানে দুটি কোষ যেহেতু পূর্বে একটি কোষ ছিল, তাই এদের সব জীন একই হয়ে থাকে। একারণে এরা দেখতে অভিন্ন হয় এবং একই লিঙ্গের হয়।
ভিন্ন চেহারার যমজ শিশু (নন আইডেন্টিক্যাল টুইন):
মায়ের দেহে সাধারণত একই সময়ে একটি মাত্র ডিম্বাণু দুটি ডিম্বাশয়ের যে কোনও একটি থেকে নির্গত হয়। যদি দুটি ডিম্বাশয় থেকেই একটি করে ডিম্বাণু একই সময়ে নির্গত হয়, তবে ওভ্যুলেশন পিরিয়ডে তার শরীরে মোট দুটি ডিম্বাণু থাকে। এসময় মিলন হলে পুরুষের শুক্রাণু উভয় ডিম্বাণুকেই নিষিক্ত করে। এভাবেই নন-আইডেন্টিক্যাল টুইন শিশুর জন্ম হয়। এসব শিশু সবসময় একই লিঙ্গের নাও হতে পারে এবং তারা দেখতে ভিন্ন হয়।
যমজ সন্তান কখন হয়:
আজকাল বাংলাদেশে যমজ সন্তান হবার সম্ভবনা আগের চেয়ে অনেক বেশী। আজকাল অনেক মায়েরাই দেরীতে সন্তান গ্রহণ করেন এবং বর্তমান সময়ে নিঃসন্তান দম্পতিদের চিকিৎসার অগ্রগতির কারণে যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে গেছে। এই জন্য শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা পৃথিবীতেই যমজ সন্তান জন্মানোর প্রকোপ বেড়ে গেছে।
একের বেশি শিশুর জন্ম, তা দুই, তিন বা তারও বেশি হলেও, সর্বদা মাল্টিপল বার্থ হিসেবে পরিচিত। একেবারে একটি শিশুর জন্মকে সিঙ্গেল্টন বলা হয়ে থাকে।
- প্রতি ৮০টি গর্ভধারণের মধে ১টিতে যমজ শিশু হয়ে থাকে।
- ৮০০০ গর্ভধারণের মধে ১টিতে শিশু হয়ে থাকে তিনটি।
- ৮০০,০০০ গর্ভধারণের মধে ১টিতে শিশু হয়ে থাকে ৪টি।
যমজ সন্তান হওয়ার কিছু কিছু কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে:
পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক বছরে যমজ সন্তান প্রসবের হার বেড়েছে । বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা সহজলভ্য হওয়ার কারণে পৃথিবীতে যমজ বা একাধিক গর্ভধারণের সংখ্যা বাড়ছে। কারণ বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় এমন কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হয় যা নারীর মাসিক চক্রে ডিম্বাণু তৈরিতে ভূমিকা রাখে। এ কারণে এক মাসিকে একাধিক ডিম্বাণুও তৈরি হতে পারে। যা যমজ জন্মের অন্যতম কারণ।
সন্তান গর্ভে আনার জন্য যে বিভিন্ন রকমের চিকিৎসা আছে, যেমন , Assisted conception – এই সব পদ্ধতিতে একের বেশী ভ্রূণ গর্ভে রোপণ করা হয়। তাই এইসব চিকিৎসা ফলে যেই মায়েরা গর্ভবতী হন, তাদের গর্ভে একের অধিক সন্তান আসার সম্ভবনা স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার চেয়ে অনেক বেশী।
মায়ের বংশে যদি যমজ হওয়ার ইতিহাস থাকে তবে যমজ জন্মদানের ঘটনা বেশি হয়। বাবার বংশের যমজ হওয়ার ইতিহাসের ওপর এ ধরনের জন্মদান খুব একটা নির্ভরশীল নয়।
যে নারীরা ৩৫ বছরের পর সন্তান ধারণ করে তাদের ক্ষেত্রে যমজ জন্মদানের ঘটনা তূলনামূলক বেশি।
বিভিন্ন বয়সের মেয়েদের যমজ সন্তান গর্ভে আসার হার নিম্নে দেওয়া আছে:
- ৬.৩% যেই মায়েদের বয়স ২০ এর কম
- ২১.৭% যেই মায়েদের বয়স ৩৫-৩৯ বছরের মধ্যে
- ৫৬.৫% যেই মায়েদের বয়স ৪৫ এর ঊর্ধ্বে
মায়ের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ভিন্ন চেহারার যমজ শিশু হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায় এবং আপনার যদি অনেক সন্তান থাকে – মানে আপনি যদি অনেকবার গর্ভধারণ করে থাকেন, তাহলেও এই সম্ভবনা অনেক অংশেই বেড়ে যায়।
জাতি ও বংশভেদেও যমজ শিশু জন্মের হার কমবেশি হতে পারে। নাইজেরিয়ার ‘ইউরোবা’ উপজাতির মধ্যে যমজ শিশুর জন্ম হয় সবচেয়ে বেশি, যা প্রায় প্রতি ১০০ জন প্রসূতির মধ্যে ১০ জন। আবার জাপানে যমজ শিশু কম খুব জন্ম নেয়।