জীবনে এমন কিছু সময়ের সম্মুখীন আমাদের হতে হয় যখন ভাগ্যকে দোষ দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না, আর এটি খুব স্বাভাবিক একটি সহজাত মানসিক প্রবৃত্তি। কিন্তু প্রতিনিয়ত যদি আপনি ভাগ্যকে দোষ দিয়ে যান এবং নিজের যোগ্যতার উপর সন্দেহ বা অবজ্ঞা প্রকাশ করতে থাকেন তাহলে সেটা অভ্যাসে পরিণত হতে সময় লাগবে না।
আপনার নেতিবাচক চিন্তাকে পেছনে ফেলে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কিভাবে উপভোগ করবেন সেই বিষয়ে কিছু পরামর্শ থাকছে এখানে।
একটি বিকল্প চিন্তা বা পথ খুঁজুন
ধরুন, আপনি চিন্তা করেছেন চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাওয়াটা আপনার জন্য বিপর্যয় হতে চলেছে, কারণ সেখানে আপনার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন চাকরি প্রত্যাশী প্রার্থীরা থাকবে। এবার আপনি কিন্তু আপনার এই নেতিবাচক চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। চিন্তা করুন, আপনি হয়তো সবার চেয়ে সেরা নন, কিন্তু আপনি আপনার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করবেন। দেখুন, আপনি আপনার নেতিবাচক চিন্তাকে ইতিবাচক চিন্তায় রূপান্তর করে ফেলেছেন। তাই যখনই আপনার মধ্যে কোনো ব্যাপার নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা আসবে, চেষ্টা করুন সেটাকে ইতিবাচক চিন্তায় রূপান্তর করতে।
মন পড়ার চেষ্টা করবেন না
যেহেতু আমরা কারো মনের খবর শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি না, তাই উল্টাপাল্টা চিন্তা না করে ভাবুন। হয়তো সেই ব্যক্তি একটি খারাপ দিনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন অথবা তিনি অন্য কোনো চিন্তায় বিভোর, তাই আপনার উপস্থিতি তার নজরেই পড়েনি। আমরা সবাই কখনো না কখনো এমন সময়ের ভেতর দিয়ে যাই, তাই না?
নেতিবাচক চিন্তাকে ছুঁড়ে ফেলুন
এই লেখার প্রথম ধাপে বলা হয়েছিল যে, সমস্ত নেতিবাচক চিন্তা নোটবুকে টুকে রাখতে। এবার সেই সমস্ত লিখা আপনি পুড়িয়ে বা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিয়ে নিজেই নিজেকে বলুন, আপনি এসব আত্ম-ধ্বংসাত্মক চিন্তা থেকে আজ মুক্ত হয়ে গেলেন।
আপনার মনের সমস্ত নেতিবাচক চিন্তা লিখতে শুরু করুন
নেতিবাচক চিন্তায় আপনি কখন এবং কেন পতিত হচ্ছেন এটা যদি নজরদারীতে রাখতে পারেন তাহলে এই চিন্তা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত নিয়েও জানতে পারবেন। একটি নোটবুকে আপনার নেতিবাচক চিন্তা কেন ও কখন শুরু হয়েছিল তা লিখে রাখুন এবং আপনি এই চিন্তার পর কেমন অনুভব করেছিলেন এবং আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ কী ছিল তা-ও লিখুন।
ইতিবাচক চিন্তাশক্তিকে সংকীর্ণ করে ফেলবেন না
চেষ্টা করুন সব কিছুর ভালো দিক নিয়ে ভাবতে। এমন না যে, খারাপ জিনিসেও আপনাকে ভালো কিছু খুঁজে বের করতে হবে। শুধু মাথায় রাখুন, আপনি যদি নিজে নেতিবাচক চিন্তাধারায় বাধা সৃষ্টি না করেন, তাহলে একটা সময় আপনি চাইলেও আর ভালো কিছু নিয়ে ভাবতে পারবেন না।
ইতিবাচক মানসিকতা সম্পন্ন মানুষের সাথে মিশুন
অনেক সময় চাইলেই হুট করে আপনি একটি বৃত্ত ভেঙে আরেক বৃত্তে ঢুকতে পারেন না। কারণ সব কিছুতেই সময় লাগে। তাই মনস্থির করার পর একটু একটু করে নেতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষদের থেকে দূরে সরিয়ে ইতিবাচক মানসিকতার লোকজনের সাথে মিশতে শুরু করুন। নেতিবাচকতা যেমন সংক্রামক, ইতিবাচকতাও তেমনই সংক্রামক।
নিজের সাফল্য উপভোগ করুন
যখন বুঝতে পারবেন, ‘আমি পারবো না’-এর পরিবর্তে ‘পারি আর না পারি পরের হিসাব। আগে তো চেষ্টা করে দেখি’- এ ধরনের চিন্তা আপনার মাথায় আসছে বা মনে উঁকি দিচ্ছে, তখন নিজেকে নিজেই বাহবা দিন। নিজের ছোটখাট অর্জনগুলো উপভোগ করতে চেষ্টা করুন। সামান্য পরিমাণ ইতিবাচকতাও যদি আপনার সারাদিনে কোনো কাজ অথবা কথার ভেতর দিয়ে প্রকাশ পেয়ে থাকে বলে আপনি অনুভব করেন, তাহলে নিজের মনকে একটি ধন্যবাদ দিয়ে ঘুমাতে যান। আপনি আপনার সাফল্য উপভোগ করতে পারলেই নতুন নতুন সাফল্য অর্জনের প্রেরণা পাবেন নিজের ভেতর থেকে।
নিজেকে বিভ্রান্ত করুন
অবাক হচ্ছেন? কখনো কখনো এমন অবস্থার সম্মুখীন হয়তো আপনাকে হতে হবে যে, কোনোভাবেই নিজেকে স্থির করতে পারছেন না, নেতিবাচক চিন্তা আপনার পিছু ছাড়ছে না। অস্থির হবেন না, এখনই সময় নিজেই নিজেকে বিভ্রান্ত করার। যখন আপনি এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হবেন, তখন নিজেকে কোনো কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করুন অথবা কোথাও থেকে ঘুরে আসুন।
নেতিবাচক মানসিকতা বা চিন্তা থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ কাজ নয়; সময় লাগবে এবং লাগবে আপনার একাগ্রতা। হাল ছেড়ে দেবেন না। মনে রাখবেন ভালো কিছুতে সময় বেশি লাগলেও আপনি যে পরিতৃপ্তি পাবেন, সেটার তুলনা পৃথিবীর আর কিছুর সাথে হয় না।